Needs & Benefits of Chemotherapy in Blood cancer

রক্তক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি

                               যা জানা প্রয়োজন

রক্তক্যান্সারের চিকিৎসা হয় প্রধানত কেমোথেরাপি দিয়ে। কিছু ধরণের রক্তক্যান্সারে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। আবার কিছু রক্তক্যান্সারের ক্ষেত্রে মুখে-খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।

সাধারণত আমাদের দেশের মানুষ কেমোথেরাপি শুনলেই অনেক ভয় পেয়ে যান। কারণ অনেক কেমোথেরাপি রোগীর শরীরে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। । তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, রক্তক্যান্সার ওষুধ না খেলেও সেরে যাবে- এমন রোগ নয়। চিকিৎসা না নিলে খুব দ্রুত রোগীর শরীর অত্যন্ত খারাপ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রোগটা রক্তে বাড়তে বাড়তে লিভার, ব্রেইন, কিডনি ইত্যাদি বিভিন্ন অংগের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এভাবে প্রায় সময়ই রোগ বেড়ে গিয়ে আর চিকিৎসাযোগ্য থাকে না।

তাই যারা কেমোথেরাপিকে ভয় পেয়ে চিকিৎসা করেন না তারা ঠিকই কিছুদিন পর আবার কেমোথেরাপি নিতে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে ক্যান্সার আরো বেড়ে যায়, ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, অধিক পরিমান ওষুধ লাগে, খরচও বেশি হয়, আবার কেমোথেরাপি-সংশ্লিষ্ট জটিলতাও বেশি হয়।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রক্তক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি প্রায় একই রকম পদ্ধতি অনুসরন করে ব্যবহার করা হয়। রোগীর বয়স, শরীরে কেমোথেরাপি সহ্য করার ক্ষমতা, লিভার-কিডনী-হার্ট এর সক্ষমতা, শরীরে রক্তের পরিমান, রোগের বিস্তৃতি, রোগীর অর্থনৈতিক সামর্থ্য সব কিছু মিলিয়েই কেমোথেরাপির সিদ্ধান্ত রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিষয়ে শ্রদ্ধেয় বিশেষজ্ঞগণ নিয়ে থাকেন।

যে রোগীর শরীর দূর্বল, যিনি কেমোথেরাপি-পরবর্তী জটিলতার শারীরিক ও অর্থনৈতিক ভার সহ্য করতে পারবেন না তাকে স্বল্প মাত্রার কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এতে শারীরিক সমস্যা ও খরচ কম হয় তবে দুঃখজনকভাবে রোগ ভাল হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। একে প্যালিয়েটিভ কেমোথেরাপি বলা হয়। অন্যদিকে, অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল, শরীরের লিভার-কিডনি-হার্টের অবস্থা ভাল, এমন ক্ষেত্রে বিশেষ করে যাদের বয়স কম তাদের পূর্ণমাত্রায় শক্তিশালী কেমোথেরাপি নিতে উৎসাহিত করা হয়। এতে ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একে কিউরেটিভ কেমোথেরাপি বলা হয়।

কিছু ধরনের রক্তক্যান্সার, যেমন সিএমএল বা ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া, শুরুর দিকেই সনাক্ত করা গেলে অল্প মাত্রার মুখে-খাওয়ার কেমোথেরাপি ওষুধেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন। সব কিছু মিলিয়ে রোগীর ভালোর জন্যই রক্তক্যান্সার রোগে কেমোথেরাপির সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্য একটি পদ্ধতি) প্রয়োগ করতে যে কোটি টাকার দামী মেশিন আর আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনা লাগে, কেমোথেরাপির ব্যাপারটা সেরকম নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট রক্তক্যান্সারের জন্য সিংগাপুর, ভারত, থাইল্যান্ড, ইউরোপ, আমেরিকা বা বাংলাদেশে একই ধরনের কেমোথেরাপি একই পদ্ধতি অনুসরন করেই দেওয়া হয়। একটি পরিচ্ছন্ন হাস্পাতাল কেবিন, জীবানুমুক্ত উপায়ে নিয়মিত হাত ধুয়ে ওষুধ দেওয়া ও নার্সিং সেবা দেওয়ার মাধ্যমে যে কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকেই রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর উপস্থিতিতে মুখে-খাওয়ার বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে কেমোথেরাপি দেওয়া যায়। মুখে-খাওয়ার ওষুধের কেমোথেরাপি রোগীগণের অনেকেই নিজেরাই চিকিৎসক এর পরামর্শে কেমোথেরাপি বাসাতেই নিয়ে থাকেন। অনেকে ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে কেমোথেরাপি নিয়ে সেদিনই রোগীগণ বাসায় চলে যান। একে ডে-কেয়ার কেমোথেরাপি বলে।

কেমোথেরাপির বেশিরভাগ ওষুধ এখন আমাদের দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। সেই সাথে প্রয়োজনীয় ওষুধ বিদেশ থেকেও আমদানি হচ্ছে। দেশেই রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ সকল ধরণের রক্তক্যান্সারের জন্য প্রয়োজনিয় কেমোথেরাপি দিচ্ছেন। বেশীরভাগ রোগীই সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সুস্থ্ আছেন। বিদেশ ঘুরে আসা অনেক রোগী এখন আপনার শহর ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামেই কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। বরং নিজ শহরের বাইরে বা বিদেশে কেমোথেরাপি-সংশ্লিষ্ট জটিলতা হলে প্রয়োজনীয় রক্ত জোগাড় করা, দামি ওষুধের টাকা জোগাড় করা বা প্রয়োজনের সময় জরুরীভিত্তিতে রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। আর যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া, ভাষাগত, পরিবেশগত ভোগান্তিতো আছেই। এই করোনা ভাইরাস অতিমারীতে এই বাস্তবতার উপলব্ধি সকলেরই হয়েছে যে দেশেই প্রায় সকল রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব ও সহজ।

তাই রক্তক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপির কথা শুনলেই ভয় না পেয়ে নিজ শহরেই একজন রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিষয়ে বিশেষজ্ঞের প্রতি আস্থা রাখুন। নিজ শহরেই চিকিৎসা নিন। বিনা চিকিৎসায় বা নানা অপচিকিৎসার চেয়ে বিজ্ঞান-ভিত্তিক চিকিৎসা নিয়ে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।

লেখক:

ডা. মুহাম্মাদ জামাল উদ্দিন তানিন

রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিশেষজ্ঞ

অনারারি কন্সাল্টেন্ট

পার্কভিউ ন্যাশনাল হাসপাতাল,

চট্টগ্রাম।

drtanincmc@gmail.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *